সংস্কৃতি:
জামালপুর জেলা বহু পুর্ব থেকেই সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে জামালপুর সংস্কৃতিতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রতিনিধিত্ব করত। জামালপুরের সিংহজানী, দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, মাদারগঞ্জ এবং নান্দিনাতে জমিদার আমলে নাটক থিয়েটার, গান বাজনা ও যাত্রার বিশেষ প্রচলন ছিল। জমিদার ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিমনা ও বিত্তবানদের পৃষ্টপোষকতায় এসব কর্মকান্ড চলত। ফলে দেশের সংস্কৃতির অঙ্গণে আজও বহু গুণী শিল্পীর পদচারণা লক্ষ্য করা যায়। এখানে নাটকে মরহুম আনোয়ার হোসেন, মরহুম আমজাদ হোসেন, মরহুম আব্দুল্যাহ আল মামুন, মরহুম ওস্তাদ ফজলুল হক খান, মরহুম নজরুল ইসলাম বাবু, মরহুম এম এস হুদা, মরহুম গিয়াস উদ্দিন মাস্টার, শুশান্ত কুমার দেব কানু, মরহুম ফরিদ আফগানী, মরহুম মহি উদ্দিন শ্রীপুরী, স্বভাব ও ছন্দকবি এ. কে. এম. রফিকুল ইসলাম(মহব্বত), মরহুম আবু জাহিদ লতা, মরহুম ফজলুল করীম ভানু, এ. কে. মাহবুব রেজা মতি, মোঃ ছানাউল হক সিদ্দিকী, এস. এম. মফিজুর রহমান, মরহুম শর্বরী ও এ প্রজন্মের রাজীব, নোলক বাবু, শশী ও টুটুলসহ অসংখ্য গুণী শিল্পী রয়েছে।
ভাষাঃ
দেশের অন্যান্য স্থানের মত জামালপুরেও বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত আছে। জামালপুর জেলার একেক উপজেলার ভাষার উচ্চারণ একেক রকম । ফলে ভাষা শৈলী ও উচ্চারণগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নমুনা হিসেবে জামালপুরের কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষা উলেখ করা হলো: ‘‘দেরী অব ক্যা, দন্ডেই বাজার থনে ঘুইরা আমু ‘’। ‘‘ইষ্টিরে বহাইয়া থও, বাত খায়ে যাব।’’ সাগাই নহুল খাছে ?
নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠীঃ
জামালপুর জেলায় নানা সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তন্মধ্যে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান ও উপজাতী বা নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠীই উল্লেখযোগ্য। জামালপুর জেলার নৃ-তাত্বিক জন গোষ্ঠীর মধ্যে জামালপুর সদর উপজেলার বাগড়া, হায়েতপুর, বিশবপুর, শ্রীপুর কুমারিয়া, তুলশীপুর, রামনগর, চাঁদপুর, মাইনপুর, তারাগঞ্জ, দড়িপাড়া, ডেঙগারগড়, বেড়াপাথালিয়া, রণরামপুর, শাহবাজপুর ও মির্জাপুরে, বকশীগঞ্জ উপজেলার লাউচাপড়া, সাতানীপাড়া, সংনাথপাড়া, টিলাপাড়া, দিগলকোণা ও বালিজুরীতে এবং দেওয়াগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা ও পাররামরামপুর ইউনিয়নে নৃ-তাত্বিক জনগোষ্টির বাস রয়েছে। এরা গারো, কুচ, বিশ্বাস,ক্ষত্রিয় ও বর্মণ সম্প্রদায়ভুক্ত। এদের জীবন ধারা সত্যই বড় বৈচিত্রময়। আমাদের বাঙালী সমাজের জীবন ধারার চেয়ে এদের জীবন যাত্রা প্রণালী কিছুটা ভিন্ন ও বিচিত্র ধরনের। এরা মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। মেয়েরা ক্ষেত খামার সহ পরিবারের যাবতীয় কাজ করে থাকে। তবে পুরুষরাও ক্ষেত খামার সহ পরিবারের অন্যান্য কাজ করে। এদের মধ্যে প্রায় অধিকাংশ ছেলে-মেয়েই শিক্ষিত। গারো ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো মিশনারীদের সহায়তায় পরিচালিত হয়। শ্রীপুর কুমারিয়া, হায়াতপুর, বাগঢ়া, বেড়াপাথালিয়া, ঢেংগারগড়, ঘোড়াধাপ ও বেলটিয়া পুলিশ লাইন, সাতানীপাড়া, কামালপুর, বালিজুরী, টিলাপড়া, দিগলকাণা ও লাউচাপড়াতে শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এদের প্রধান কর্ম বাঁশ বেত, মাছ ধরা, দিন মজুরী, চাকুরী, সেলাই, বৃক্ষরোপন, হাঁস-মুরগী, ছাগল ও গরম্ন পালন। এদের বসত বাটী ব্যতীত আবাদী কোন জমি নেই বললেই চলে। এরা অন্যের জমি বর্গা চাষ করে। এদের খাবারের মধ্যে রয়েছে ভাত, মাছ, মিষ্টি আলু, শিকড়ের আলু, থামা আজং, গরু, ছাগল, খাসী, শূকর , কচ্ছপ, কুইচ্চা, নাখাম, চু, কাকতোয়া ইত্যাদি।
মেয়েরা বিয়ের পর স্বামীকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে আসে। এদের উত্তরাধীকারী হলো মেয়ে। এদের সামাজিক উৎসবগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২৫ ডিসেম্বর বড় দিন এবং ইংরেজী নববর্ষ। সামাজিক উৎসবের মধ্যে ওয়ানগালা- যা আশ্বিন মাসে পালিত হয়। ঐ দিন নাচ গানসহ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে। অন্যান্য উৎসবের মধ্যে রয়েছে আদিবাসীস্নান , চৈত্র সংক্রান্তি মেলা। এদের মধ্যে কিছু কিছু কুসংস্কারও লক্ষ্য করা যায় তন্মধ্যে মদপান ও চুপ্রধান।
এদের বিয়ে আরো বৈচিত্রময়। ছেলে-মেয়ের পছন্দে যে সম্পর্কের সৃষ্টি হয় তাকে দদকা বলে। যুবক যুবতী একত্রে শারিরীক ভাবে মিলিত হলে দদ্কা হয়। দদকা হলে সামাজিক ভাবে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। বিয়ের বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ২০-২২ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২০-২৫ বছর। এদের মধ্যে কোন তালাক প্রথা নেই। স্ত্রী মারা গেলে নিজ মামী অথবা শ্বাশুড়ীকে বিয়ে করতে হতো তবে বর্তমানে তারা শিক্ষিত হওয়ায় এ প্রথা আপতত বন্ধ বলে জানা যায়। এদের মধ্যে ছোট খাটো বিরোধ দেখা দিলে তারা সাধারণত কোর্ট কাচারীতে যায় না। ট্রাইবাল এসোশিয়েসনের নেতৃবৃন্দরা এদের মধ্যকার যে কোন বিরোধ আপোষের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস