কথায় বলে ‘’ সুস্থ দেহে সুস্থ মনের বাস’’। জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি খেলাধূলার চর্চা করা খুবই প্রয়োজন। কারণ খেলাধূলা ব্যতীত জীবন পূর্ণতা পায় না। ফলে খেলাধূলা জীবনের জন্য প্রয়োজন। খেলাধুলায় এক সময় তৎকালীন জামালপুর মহকুমার খুবই সুনাম ছিল। জামালপুরে ফুটবল, হা-ডুডু, হকি খেলার খুবই প্রচলন ছিল। জামালপুর জেলা স্কুল, দেওয়ানগঞ্জ সুগার মিল, পিংনা হাই স্কুল এবং নান্দিনা মহারাণী হেমম্তকুমারী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়মিত খেলাধুলার চর্চা হত। এখানকার খেলোয়াড়গণ জাতীয়,আঞ্চলিক এবং বিভাগীয় পর্যায়ে অংশ নিত। বিগত সময়ে জামালপুর মহকুমা খেলাধুলায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে নান্দিনা স্কুল পূর্ব পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন ছিল । এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বর্গীয় নলিনী মোহন দাশ মাখন বাবু নিয়মিত খেলাধুলার চর্চা করাতেন। যারা খেলাধুলায় ভাল ছিল তাদের জন্য বেতন ও হোস্টেলে খাওয়া ফ্রি ছিল। যার ফলে ভাল খেলোয়াড় তৈরী করা সহজ ছিল। এখানে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহ করে এনে তাদের কে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভাল খেলোয়াড়ে পরিণত করা হত। এ জেলায় এক সময় লাঠি খেলার প্রচলন ছিল। সারা বছরই লাঠি খেলা হত । তবে মহররম মাসে এ খেলার আয়োজন বেশী হত। এলাকা ভিত্তিক প্রতিযোগিতা হত। ভাল ভাল পালোয়ানগণ বিভিন্ন দলে খেলত। অনেক সময় খেলা নিয়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটত। নদী মাতৃক জামালপুর জেলায় বর্ষকালে নৌকাবাইচ হত। বিভিন্ন থানার মধ্যে প্রতিযোগিতা হত। বর্ষাকালে মানুষ ঘরে অলস বসে না থেকে নৌকাবাইচকেই চিত্তবিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিত। বৈশাখ মাসে হাল খাতার মহোৎসব হত। মানুষ নানা ভাবে উৎসবটি উদযাপন করত। এ সময় ঘোড় দৌড়ের আয়োজন বেশী হত। বিভিন্ন জেলা থেকে তেজী ঘোড়া এনে সমাজের বিত্তবান ও সৌখিন মানুষেরা এসব খেলার আয়োজন করত। আবালবৃদ্ধবণিতা এসব ঘোড় দৌড় উপভোগ করার জন্য আসত। এ মেলায় গৃহস্থালী ও রকমারী জিনিষ পত্রাদি বিক্রয় হত।
ঘোড়দৌড়ঃ
ঘোড়দৌড় বাইসাইকেলের বহুল প্রচলনের পূর্বে এতদাঞ্চলের প্রত্যেক অবস্থাপন্ন মুসলমানই ঘোড়ায় চলাচল করিতেন। ওয়েলার তাজি, ভুটিয়া, গণিপুরি, আরবী সকল শ্রেণীর ঘোড়াই এখানে যাইত। মাঝে মাঝে ঘোড়দৌড় এর প্রতিযোগীতা হইত। কোন কোন সম্পন্ন গৃহস্থ শুধু প্রতিযোগীতার জন্যই উচ্চ মূল্যে দৌড়ের ঘোড়া খরিদ করিয়া পোষণ করিতেন। বালক, যুবক, বৃদ্ধ সকলেই অশ্বারোহণ ও অশ্বচালনে অভ্যস্থ ছিল। ছনকান্দার খাজুর মিঞা, সন্যাসীচরের জয়নাল মীর প্রভৃতি জকিগণ অশ্ব চালনায় যথেষ্ঠ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ।
নৌকা বাইচ:
ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঝারকাটা, ঝিনাই ও আলাই নদীর তীরবর্তী চর মরুস্থালীর লোকেরা বাইচের জন্য খুব লম্বা লম্বা নৌকা প্রস্তুত করিয়া বাইচ প্রতিযোগীতা করিয়া থাকে। নৌকা বাইচের সময় প্রতি নৌকায় ২০ হইতে ১০০ জন দাড়ী এক সংগে দাড় চালনা করে। তাদের প্রাণমাতানো সরিগানের সুরে এবং শত শত দাড়ের সংঘাতে যমুনার জল উদ্বেলিত ও উর্মিধুনিত হইয়া উঠে।
ক্রিড়াবিদঃ
ঐতিহ্যবাহী জামালপুর জেলায় বহু কৃতী ক্রিড়াবিদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। এদের মধ্যে ফুটবলে আতাউল হক মুকুল মিয়া, ঘুনু মিয়া, আব্দুল ওহায়েদ, সিদ্দিক পেশকার, আতিয়ার রহমান, রেহান আলী, জহুরুল হক, নান্নু, চুন্নু, ফরহাদ সিদ্দিকী প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ।
জুডোতে হাফিজুর রহমান, এ্যাথলেটে এমদাদুল হক রঞ্জু, শাহীন উদ্দিন ও আল আমিন, ক্রিকেটে আল শাহারিয়ার রুকন, রকিবুল হাসান নয়ন, মহিলা ক্রিকেটে আয়েশা আকতার, লন টেনিসে শোভন জামালী, শ্যুটিংয়ে সাবরিনা রহমান সাগর, কুস্তিতে আমিনুল হক, বডি বিল্ডিং এ মিস্টার বাংলাদেশ মাহসুদুর রহমান মাসুদ প্রমূখ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস